সম্পত্তি ‘হেবা’ অর্থাৎ দান করার বিধান

সম্পত্তি ‘হেবা’ অর্থাৎ দান করার বিধান

নাসরীন সুলতানা

ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান। এ জন্য এর অনুসারীদের আইনগত অধিকার ও বাধ্যবাধকতার নিয়ন্ত্রনের জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণ আইন রয়েছে।

বিধিবদ্ধ আইন মুসলমানদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ১৮৭২ সনের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ১২৩ ধারা ভারতীয় উপমহাদেশের সব রাজ্যে বলবৎ থাকা স্বত্বেও ন্যায়বিচার (ন্যায়পরায়ণতা) ও সুবিবেচনার জন্য সম্পত্তি হস্তান্তর একটি সম্পূর্ণ আইন।

‘হেবা’ মুসলিম আইনের বিধান অনুসরণেই কার্যকরী। মুসলিম আইনের বিধান অনুযায়ী হেবা’র তিনটি অত্যাবশ্যকীয় শর্ত হলো দাতা কর্তৃক দানের কথা ঘোষণা করতে হবে।

সম্পত্তি ‘হেবা’ অর্থাৎ দান করার বিধান

* হেবা বা দান করতে হয়ে নিঃশর্তে।
* দান গ্রহীতা কর্তৃক বা তৎপক্ষে অন্য কেউ সুষ্ঠুভাবে গ্রহণ করতে হবে।
* দাতা কর্তৃক গ্রহীতাকে দানের বা হেবার বিষয়বস্তুর দখল প্রদান করতে হবে। মৌখিক দান হলেও কিংবা দানের দলিল রেজিষ্ট্রি না হলেও দান সম্পূর্ণ হবে।
অন্যথায় দানের দলিল সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ১২৩ ধারা মতে রেজিষ্ট্রি হলেও কার্যকরী হবে। হেবা বা দান করা সম্পত্তির দখল, হস্তান্তর বাধ্যতামূলক। অবশ্যই তা রেজিষ্ট্রি করে নিতে হবে।

ঘটনা-১: হালিম সাহেবের একমাত্র কন্যা। প্রাপ্তবয়স্ক বিয়ে হয়নি। হালিম সাাহেব উত্তরাধিকার সূত্রে অঢেল সম্পত্ত্রি মালিক। তার এক ভাইয়ের ছেলে মেয়েরা জীবিত। কিন্তু তাদের সাথে ভালো সম্পর্ক নেই। হালিম সাহেবের মৃত্যুর পর মেয়ে উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী তাঁর বাবার মোট সম্পত্তির অংশ পাবেন। বাকি সম্পত্তি হালিম সাহেবের ভাই পাবেন। কিন্তু হালিম সাহেব চান না তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর ভাই এ সম্পত্তি পান। হালিম সাহেবের ইচ্ছা অনুসারে তাঁর একমাত্র মেয়েই সব সম্পত্তি পাক।

ঘটনা-২: আবুল কালাম এক বৃদ্ধ ব্যক্তি। জীবন সায়াহ্নে দাড়িঁয়ে আছেন তাঁর দুই ছেলে আর ছেলের পক্ষের নাতি -নাতনী ২ জন। তাঁর ইচ্ছা মৃত্যুর পর তাঁর নাতি-নাতনিরাই তাঁর সম্পত্তি মালিক হোক। এজন্য তিনি এখনই সম্পত্তি দিয়ে দিতে চান তাদের নামে। কিন্তু নাতি-নাতনি নাবালক হওয়ায় তিনি কীভাবে লিখে দেবেন তা বুঝতে পারছেন না।

ঘটনা-৩: এক বাবা তাঁর সম্পত্তি ছেলেকে লিখে দিতে চান। কিন্তু ছেলেটি প্রাপ্ত বয়স্ক হয়নি। বাবা কি পারবেন তার ছেলেকে সম্পত্তি দান করতে?
সমাজে এ ধরণের সমস্যা প্রায়ই দেখা যায়। সাধারণত দানের মাধ্যমে একজন সম্পত্ত্রি মালিক তাঁর ওয়ারিশ কিংবা অন্যদের সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারেন। এটি আইনে স্বীকৃত।
দান এবং হেবা এক নয়। অনেকে তা এক করে ফেলেন।
* হেবা হচ্ছে মূসলমানদের জন্য।
* আর দান হচ্ছে যে কোন ধর্মের লোকই করতে পারেন।
দান করতে হলে দাতা ও গ্রহীতার সম্পূর্ণ ইচ্ছা ও সম্মতি থাকতে হয়।
* দাদা-দাদী, মা-বাবা, ছেলে-মেয়ে নাতি-নাতনি, আপন ভাইবোন, স্বামী, স্ত্রীকেও হেবা করা যায়।
* প্রতিটি হেবা দান দলিলের জন্য নির্দিষ্ট ফি দিতে হবে।
২০০৫ সালে আগষ্ট থেকে হেবা করা সম্পত্তি রেজিষ্ট্রি করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

উপরের ঘটনা-১, অনুযায়ী হালিম সাহেব তাঁর মেয়েকে সব সম্পত্তি দানপত্রের মাধ্যমে দান করে দিয়ে যেতে পারেন। দান করে দিলে তার মেয়েকে ঐ সম্পত্তি সঙ্গে সঙ্গে হস্তান্তর করতে হবে।

ঘটনা-২ এর ক্ষেত্রে দাদা তাঁর নাতি নাতনিদের সম্পত্তি দান করতে পারেন। তবে দু’জন নাবালক থাকায় সম্পত্তি হস্তান্তর করা যাবে না ,যতদিন না তারা প্রাপ্ত বয়স্ক হচ্ছে। এক্ষেত্রে বৈধ অভিবাবক অর্থাৎ তাদের বাবাকে ওই জমি হস্তান্তর করতে হবে।

ঘটনা-৩ এ দেখা যায় বাবা তার নাবালক ছেলেকে সম্পত্তি দান করতে চান। এক্ষেত্রে দান করা বাধতামূলক নয়। যতদিন না তাঁর ছেলে প্রাপ্ত বয়স্ক হচ্ছে। ছেলে প্রাপ্তবয়স্ক হলে সম্পত্তি হস্তান্তর করতে হবে। প্রশ্ন উঠতে পারে কোন দান বাতিল করা যায় কিনা। একবার সম্পত্তি দান করার পর আদালতের ডিক্রী ছাড়া বাতিল করা যাবে না। তবে দানপত্র সম্পাদন করলেও সম্পত্তিটি হস্তান্তর করা না হলে কিছুক্ষেত্রে তা বাতিল হতে পারে। যেমন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দান, নিষিদ্ধ ধাপের মধ্যে দান, দান গ্রহীতা যদি দানের পর পর মারা যান, এসব দান বাদেও এক ধরনের দান আছে যা কোন কিছুর বিনিময়ে করা যায়। এতে দুই ব্যক্তির মধ্যে নির্দিষ্ট সম্পত্তির পারস্পরিক দান থাকতে হবে। একে হেবা এওয়াজ’ বলা হয়।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment